Book Review: (03)
#দেয়াল
___হুমায়ূন আহমেদ
##এটি একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। যেটি মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তীকালে দেশের কিছু কালো ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনার সাথে সাথে লেখক তার পরিবারের দুর্দশার কথাও টেনে এনেছেন। বইটির প্রথম প্রকাশকালে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট হয়। দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশ হয় লেখকের মৃত্যুর পরে। ভূমিকা লেখেন আনিসুল হক।
যেহেতু বইটির বিষয়বস্তু একটু রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। আমিও আমজনতাদের একজন, তাই নিজের মতামত কিছু দেব না। অত্যন্ত সংক্ষেপে বলছি__
#চরিত্র:
১.হুমায়ূন আহমেদ : সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন কোথাও প্রথম পুরুষ আবার কোথাও উত্তম পুরুষের ভূমিকায়।
২. শফিক : অবন্তীর গৃহ শিক্ষক।
৩.অবন্তী: অত্যন্ত সুদর্শনা নারী ব্যক্তিত্ব।
৪.সরফরাজ : অবন্তীর দাদা। খেয়ালী সন্দেহপ্রবণ।
৫. রাধানাথ : চিরকুমার। শেষ বয়সে অন্ধ হয়, ধনী। শফিকের সাথে গলায় গলায় ভাব।
৬. অবন্তীর মা-বাবা: তাকে দাদার কাছে রেখে ফ্রান্সে থাকে। অতিমাত্রায় পাশ্চাত্য।
৭. বঙ্গবন্ধু : তাকে হত্যা করা হয়।
৮. মেজর ফারুক : হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।
৯. মেজর রশীদ : সহায়তাকারী
১০. মেজর ইশতিয়াক : "
১১. খন্দকার মোশতাক : সমর্থনকারী। বঙ্বন্ধুর পর রাষ্ট্রপতি হন।
১২. কর্নেল আবু তাহের : বীর উত্তম। যুদ্ধে বা পা হারান।
১৩. নেত্রকোনার গদিনসীর পীর জাহাঙ্গীর ও তার বাবা : ভবিষ্যৎ বানী করতে পারে।
১৪. মেজর জিয়াউর রহমান : ৭ম রাষ্ট্রপতি।
১৫. জেনারেল মন্জুর : ঘাতক পাঠিয়ে জিয়াকে হত্যা।
## অবন্তীর মাস্টারকে সরফরাজ খান সন্দেহ করে, সে তার নাতনির সাথে পড়ানোর নাম করে প্রেম করে কি না। ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। যুদ্ধের সময় তার নাতনিকে পীরের কাছে রেখে আসেন যাতে পাকিস্তানিদের কাছে নির্যাতিত হতে না হয়। অবন্তীকে এক হানাদার, শামস্ দেখে বিবাহ করতে চাইলে পীর দ্রুত তার সন্তান হাফেজ জাহাঙ্গীরের সাথে বিয়ে দেয়। ১২ বছরের মেয়ে তা কখনও মেনে নেয় নি। যুদ্ধে রাজাকাররা হানাদারদের প্রণোদনা দেয়। যুদ্ধ শেষ হলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্ধু। অন্যদের মতো থাকার জন্য বাসা পায় হুমায়ুন পরিবার। রক্ষী বাহিনী তাদের বের করে দিলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে তারা। এজন্য লেখক দুঃখ প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নুইয়ে পড়া অর্থনীতিতে জনগণ অন্ন পায় না। এসময় বঙ্গবন্ধু অরাজকতা ও দুর্নীতি পরায়ন স্বার্থান্বেষী একদল চোরের দলের কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর মিশুক প্রকৃতির দিকটা ফুটে উঠেছে। বাকশাল গঠিত হলে কিছু উগ্র সামরিক কর্মী তা মেনে না নিয়ে তার প্রতি একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ এনে ১৫ আগষ্ট ভোর ৫:১৫ তে বাড়ি ঘেরাও ও ৫:৪৫ মিনিটে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এসময় জাতীয় নেতার ভাষ্য আমরা সবাই জানি। বঙ্গবন্ধুকে তার বিপদের কথা ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতে পারেন নি সন্তানতুল্য মানুষগুলো তার বিরুদ্ধে ছক্কার গুটি চালতে পারে। মেজর ফারুক, খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি বানায়। লেখক এখানে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এই জন্য যে এমন নেতার প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেদিন কোন বাঙ্গালী প্রতিবাদ করে নি বরং মিষ্টি বিতরন করেছিল কিছু জায়গায়। ৬ষ্ঠ রাষ্ট্রপতি সাদাত সায়েমের পরে মেজর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হন। বইটিতে বলা হয়েছে,, জিয়া সৎ ছিলেন। তার মৃত্যুর পর কোন সঞ্চয় ছিল না বলে রাষ্ট্রকে তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। কিন্তু, জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী প্রধান তিনজনকেই ( মেজর ফারুক, মেজর রশীদ ও মেজর ডালিম) লন্ডন পালিয়ে যেতে সাহায্য করে ও শেষে বাকিদের গ্রেফতার করে ফাসি দেয় (১১৪৩ জন)।এর মধ্যে তাহেরও ছিলেন। তাহের ( বীর উত্তম) দুঃখ করেছিলেন। তার মৃত্যুর ৩৫ বছর পর বাংলাদেশ আদালত বলে যে, তাহেরের মৃত্যু ছিল অবৈধ। তাক ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান। এই অন্যায় পরিস্থিতিতে একমাত্র বিরোধীতা করে মেজর মন্জুর। শেষে এই মন্জুরের পাঠানো ঘাতক এর কাছেই জিয়া প্রাণ হায়ায়।
বইয়ে যতটুকু আছে ঠিক ততটুকুর সংক্ষেপনই এখানে বললাম। যেহেতু রাজনৈতিকভাবে উপন্যাসটি বিতর্কিত। তবে, হুমায়ুন আহমেদ উপন্যাসটিতে একঘেয়েমিভাবটা কাটাতে অনেক উপমা ও রম্যের অবতারণা করেছেন।
বিভূতিভূষণ বলেছেন, "ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসকে শুধু উপন্যাসই ভাবা উচিত।"
তাই এসব সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নাই।
No comments:
Post a Comment
Never share any links or personal information. Keep your privacy strong.