Book Review: (14)
অরক্ষণীয়া
__ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
চরিত্র:
১. অতুল: শিক্ষিত, অসুস্থে জ্ঞানদা তাহার সেবা করিয়া সারিয়া তুলে, ভালবাসে। স্বর্ণার মামাতো ভাই।
২. জ্ঞানদা: কুশ্রী , কালো, বেটে, ভদ্র, সহিঞ্চু মেয়ে।
# ৩ ভাই ও বৌ:
* গোলকনাথ (বড়), মৃত : বৌ- স্বর্ণা : নির্দয়, হিংসুটে, নিঃসন্তান।
* প্রিয়নাথ (মেজো), মারা যায়, মেয়ে-জ্ঞানদা, বৌ- দূর্গা মনি: গরিব ,সহিঞ্চু , হতভাগী।
*অনাথ (ছোট) , মেয়ে-মাধুরী; ছোট বৌ: অলস, নিরব, আরাম প্রিয়।
৪.মাধুরী: সুন্দর, শিক্ষিত, আনাড়ী।
৫. শম্ভু চ্যাটার্জী: হরিপালে থাকে। দূর্গার বড় ভাই।
৬. ভামিনী (পোড়াকাঠ) : ম্যালেরিয়ায় পোড়া কাঠ। তবে আতিথেয় প্রবন।
মূল কাহিনী:
অতুলের দূরারোগ্য রোগে তখন কেউ কাছেও যেত না তখন জ্ঞানদা তার সেবা করিয়া সুস্থ করিয়া তুলিয়াছিল। সেই থেকে অতুল তাহাকে ভালবাসিয়াছে। কলিকাতা হইতে দু গোছা চুড়ি আনিয়া উপহার দেয় তাকে । পিতার মৃত্যুর দিন অতুল প্রিয়নাথকে কথা দিয়াছিল তার মেয়ের ভার সে নিয়া লইল। স্বামী হারিয়ে অনাথের ঘাড়ে পড়া দূর্গা ও মেয়ে দু বৌয়ের নানা নির্যাতন সহ্য করিত। অনাথের রান্নাও তাহার করিতে হইত। তাহার উপর নানা ঝাঁঝালো কথা। একদিন মেয়ে লইয়া হরিপালে বাবার ভিটায় ভাই শম্ভু চ্যাটার্জীর বাড়িতে গিয়া উঠে। ভামিনী তিক্ত কথা বলিলেও সে দয়ালু ছিল। শম্ভু অনূড়া মেয়ের বিবাহ দিতে চায় তার পরিচিত এক দুঃশ্চরিত্র বৌ মেরে ফেলা বুড়ো পাত্রের কাছে, যাহাতে তাহার কট দেওয়া জমি ছুটাইয়া লইতে পারে। জ্ঞানদার ম্যালেরিয়া হয়। জ্বরে কালো মুখ আরো কালো, মাথার চুল উঠে যাইয়া কুশ্রীতর হইয়া উঠিয়াছে। দাদার ঠিক করা পাত্রের কাছে দূর্গা তাহার মেয়েকে দেবে না এবং পাত্রের তাহার ঠিক করাই আছে বলিয়া স্বামীর ভিটায় আসিয়া উপস্থিত হয়। শুরু হয় আবার সেই অন্তর ছিদ্র করা স্বর্ণার কথার ঝাঁঝ। দূর্গা চিন্তায় অসুস্থ হইয়া উঠে। অতুল তাহার দেওয়া কথা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া বিয়ে ঠিক হয় অনাথের মেয়ে, মাধুরীর সাথে। ছোট বৌ তাহাদের কষ্ট বুঝিত, কিন্তু প্রতিবাদ করিত না। অতুল তাহার মেয়েকে বিবাহ করুক এটা এটা সেও সমর্থন করিত না। অনাথ জ্ঞানদাকে বিদায় করিতে সব বুড়ো, অপাত্র আনিতে থাকে। কিন্তু, জ্ঞানদার কুশ্রীতে তাহারা নিন্দা করিয়া চলিয়া যাইত। এমন বিশ্রী মেয়ে সকলেরই চক্ষুশূল হইয়া পড়ে। অসুস্থ মা অসহ্য হইয়া উঠিয়া মেয়ের মৃত্যু কামনা করিয়া উঠিল। জ্ঞানদা তাহাও সহ্য করিয়া যায়। মরিতে সেও চায় ,কিন্তু অসুস্থ মাকে একা রেখে যেতে পারে না। একদিন এসব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাইয়া পরলোকগমন করে দূর্গা। চিতায় আগুন দিতে সকলেই একত্রিত হইয়াছিল। অতুলও আসিয়াছে। জ্ঞানদার চোখের পানি শুকাইয়া অন্তর কাঠ হইয়া গিয়াছে। গিয়ে নদীর ধারে মুখ ফিরাইয়া বসিয়া রইল। অতুলের মনে চিতার আগুনে ভাসিয়া উঠিল তাহার সেই দূর্দিনের কথা। যেদিন তাহার পাশে কেউই ছিল না। একমাত্র ঐ কুশ্রী মেয়েটিই ছিল । এতদিন সেই মেয়েটি তাহার জন্য অপেক্ষা করিয়া, অনেক লজ্জা বিলাইয়া দিয়া অনেক অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করিয়া আসিয়াছে। আর সহ্য না করিতে না পারিয়া জ্ঞানদা তাহার অন্তরের মধ্যে পুশিয়া আসা আশা টাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া অতুলের দেয়া চুড়ি গুছা দুটো তাহার সামনেই ভাঙ্গিয়া চলিয়া আসিল। অতুল তাহাই কুড়িয়া আনিয়া মুঠো ভরে জ্ঞানদার সম্মুখেতুলিয়া ধরিয়া ক্ষমা চাইয়া তাহাকে সাথে করিয়া বাড়ি লইয়া চলিল। মুখপোড়া মেয়েটির মুখ যেন রাঙ্গা হইয়া উঠিয়াছে।
No comments:
Post a Comment
Never share any links or personal information. Keep your privacy strong.