Book Summery:(18)
বৈকুণ্ঠর উইল
____শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
চরিত্র:
১.বৈকুন্ঠ মজুমদার: মুদি দোকানদার, সৎ, আদর্শবান।
২.গোকুল ( বড়ছেলে) : সহজ সরল, সৎ, মা মৃত, ছাত্র ভালো না হওয়ায় বাবার দোকানের দায়িত্ব নেয়।
৩.বিনোদ ( বেনদা): ছোট ছেলে, ছাত্র ভালো, সঙ্গ দোষে নষ্ট।
৪.ভবানী: বিনোদের মা। গোকুলের সৎ মা। স্বামীর প্রতি অনুগত। অন্য সাধারণ মায়ের মতো না।
৫. মনোরমা: গোকুলের স্ত্রী। কূটবুদ্ধিতে নিরন্তর।
৬. নিমাই রায়: গোকুলের শ্বশুর।
৭.জয়লাল বাড়ুজ্জে: স্কুলের শিক্ষক, সুবিধাবাদী।
মূল কাহিনী:
বৈকুন্ঠ মজুমদার মুদি দোকান করে। কখনও কাউকে ঠকায় নাই। স্ত্রী ভবানী অনুগত ও স্বল্পভাষী। গোকুল তার সৎ ছেলে হলেও কখনো সে তাকে অন্য চোখে দেখে নাই। গোকুল পরীক্ষায় ফেল করেছে বলে পড়াবাদ দিয়ে বৈকুণ্ঠ তাকে দোকানে বসাতে চাইলে ভবানী তাকে বাধা দেয়। তাকে আরেকটা সুযোগ দিতে বলে, গোকুলকে বুঝ দেয়। এদিকে বিনোদ ক্লাসের ফার্স্ট হয়ে একেবারে ডবল প্রমোশন পেয়ে বসেছে। তাই দেখে জয়লাল এসে তেলা মাথায় তেল দিতে শুরু করে দিল। সে গোকুলকে গর্ধভে নামিয়ে এনে বিনোদের আকাশচুম্বী প্রশংসা করে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ধরিয়ে দিয়ে বৈকুণ্ঠের দোকানের বাকি খাওয়ার সম্ভাবনা আরও শক্ত করিল। গোকুল এতই সরল যে পরীক্ষায় দেখার সুযোগ করে দিলেও দেখে নাই। বিনোদ কলিকাতায় লেখাপড়া করতে গিয়ে সঙ্গদোষে খারাপ হয়ে উঠেছিল। বৈকুণ্ঠ মারা যাবার সময় তার কষ্টে গড়া সম্পদ ও দোকান বিনোদের নামে কিছু দিলে পাছে নষ্ট করে ফেলে এই ভয়ে গোকুলকে লিখে দিয়ে যায়। আর বলে যায়, সে যেন তার মায়ের প্রতি অন্যায় না করে। সে ভালো হলে তাকে যেন সে তখন দেখে। গোকুল বিনোদকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকত। তার ভাই মেজিস্ট্রেট হবে বলে গর্ব করে। তার সকল খরচ গোকুলই বহন করে। বাবার শ্রাদ্ধের সময়ও বিনোদ আসছে না দেখে গোকুল জয়লালের মাধ্যমে অনেক খবর পাঠিয়েছে। এই সুযোগে জয়লাল অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ২ দিন আগে বিনোদ আসে । কিন্তু,কারো সাথেই কোন কথা বলে না। বৈকুণ্ঠের লিখে দেয়া উইলের বিরুদ্ধে এবার দাবি করে বসবে ভেবে স্ত্রী মনোরমা ,নানা রকম কূটবুদ্ধি দিতে থাকে স্বামীকে। গোকুল সহজ সরল, তাই সবকথায় সায় না দিয়েও কিছু কিছু কথায় আবেশিত হয়ে মাকে ব্যথা দিতে শুরু করল। স্ত্রীও ভবানীকে বাঁকা কথায় অতিষ্ঠ করে তুলল। মনোরমা , স্বামীর ব্যবসার ভার নিতে তার বাবা ধূর্ত, নিমাই রায়কে , ডেকে আনে। সে প্রথমেই এসে পুরানো হিসাব রক্ষককে তাড়িয়ে দিতে চাইলে ভবানী তাতে বাধা দিয়ে গোকুলকে হুকুম দিয়ে যায়। নিমাই রায় গোকুলকে ভবানী আর বিনোদের বিরুদ্ধে নানা ভুল তথ্য মিথ্যা অপবাদ দিয়ে খেপিয়ে তুলতে চায়। মনোরমার তিক্ত কথা আর সহ্য করতে না পেরে ভবানী তার ছোট ছেলেকে বলে তাকে নিয়ে যেন সে অন্যত্র চলে যায়। বিনোদ আলাদা বাসায় মাকে নিয়ে যেতে চাইলে গোকুল বাধা দেয়। কেন চলে যাচ্ছে এসবের কিছুই সে জানে না। অথচ, তার স্ত্রী বলেছিল, গোকুল নাকি তাদের চলে যেতে বলেছিল। গোকুল তাদের অত্যন্ত ভালোবাসত তাই সে কেঁদে কেঁদে বলল, মা কিভাবে ছেলেকে ছেড়ে চলে যেতে পারে? আলাদা বাসায় থাকা বিনোদকে জয়লাল খেপিয়ে তুলল। তার সম্পদ কেন সে দাবি করছে না। মাঝেমধ্যে গোকুল এসে তাদের বাসায় বাজার করে দিয়ে যায়। গোকুল তখনও তার ভাইকে নিয়ে লোকের সামনে গর্ব করে, তার ৪ টি পাশ করা ভাই মেজিস্ট্রেট হবে। বিনোদ এম.এ পরীক্ষা দেবে না শুনে মনে কষ্ট পায়। বিনোদ একদিন দুষ্টু বন্ধু আর জয়লালের প্ররোচনায় দাদার কাছে সম্পদ দাবি করতে আসে। বাবার কাছ থেকে সব সম্পদ একাই গোকুল লিখে নিয়েছে বলে চোর অপবাদ দেয় বিনোদের বন্ধুরা। যদি বিনোদ বলে সে চোর তাহলে সব দিয়ে চলে যাবে। জয়লাল তার মাকে স্বাক্ষী দিতে বললে, গোকুল বলে, কি মাকে তুই আদালতে নিবি..!! নিগে যা সব সম্পদ নিগে । নিমাই রায় বাধা দেয়, এভাবে সব দিয়ে দিতে চাইলে। গোকুল বিনোদকে বলল, তুই আমার পা ছুঁয়ে বল, আমি চোর। বিনোদ কেঁদে ওঠে বলল, আমি মদ খাই, কিন্তু আমি তোমাকে চিনি দাদা। তোমার পা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি, আর কোনদিন মদ খাবো না। তোমার ভাই বলে যেন নিজেকে পরিচয় দিতে পারি আশির্বাদ করো। বলে পায়ে লুটিয়ে পড়ল।
©Mithun
No comments:
Post a Comment
Never share any links or personal information. Keep your privacy strong.