১২-১০-২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ
সরিষাবাড়ী হতে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস এর "ঝ"বগির ০১ নং আসনটাই আমার ছিল। অনলাইন টিকিট একেবারেই শেষের দিকে থাকায় আসনটি ভাল পাই নি।
সন্ধ্যাগড়িয়ে তখন ৬:২৮ টা। ট্রেনটি কালিবাড়ী অতিক্রম করছে। এহেন সময়ে একটি ঢিল কোথা থেকে জানালা দিয়ে উড়ে এসে যেন আমার Temporal Bone টাতে একটি টং করে আওয়াজ তুলল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটির দলাটা ছোট ছোট কণায় পরিণত হয়ে সারা শরীরে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই সিংহভাগ কণা টি-শার্ট এর ভিতর গিয়ে কারসাজি দেখানো শুরু করে দিয়েছে। ওঠে দাঁড়ানো মাত্রই আসনটির উপর ক্ষণিক মাটিবর্ষণ হলো।
দীর্ঘসময় পর সম্বিত ফিরে পাবার মাধ্যমে মনে বেশ কিছু প্রশ্নের উদয় হলো,
* আমরা কোথায় বাস করছি..! আমরা কি কখনও আমাদের কৃতকর্মের কথা ভেবেছি..! আমরা কি আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত..! আমরা কি কখনও অবুঝদের বুঝিয়েছি...! অসচেতনদের সচেতন করার ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়েছি কখনও..! ভুল কিছু করতে দেখলে নিষেধ করেছি..! আমাদের অধিনস্তকে শাসন করেছি কখনও...!
আমিও হয়ত সবসময় করি না। কিন্তু করা কি উচিত না আমাদের..!?
আজ আমাকে একজন ঢিল দিয়েছে, ভাগ্যিস বেচে গেছি। ভাবুন তো, এই ঢিলটাই যদি একটা শিশুর গায়ে লাগত অথবা এটি মাটির শক্ত দলা না হয়ে কোন ইট বা লাইনের পাথর হতো..!! তাহলে হয়ত আজ এই মধ্যরাতে কথাগুলো লেখার সুযোগ হতো না।
একটা সত্যি ঘটনা শেয়ার কতে চাই, ২০১৫ সাল। আমার এক বন্ধু (প্রয়াত) একসাথে একই মেস এ ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ হতে ট্রেনে "GM" যাচ্ছিল। জানালার পাশেই বসেছিল। পথের মধ্যে কেও পাথর দিয়ে ঢিল দিয়েছিল।দুঃখের বিষয়, ঢিলটা একদম বাম চোখে লাগে। বাকিটা বলার আর ভাষা নাই। শেষ পর্যন্ত, যার কিনা ভর্তি পরীক্ষার হলে বসার কথা ছিল, সে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে রইল।
আমি এমনটি নিজ চোখে দেখেছি, এক ১৪/১৫ বছরের ছেলে ট্রেনের জানালাকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছোড়ল। আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে অভিভাবক গুছের কেও। আশ্চর্য বিষয়, সে তার সন্তানকে এটা করতে নিষেধ করল না..! এমনকি সাথে সাথেই আরেকটা ঢিল ছুড়ল।
এই হচ্ছে আমাদের মনোবৃত্তি..!!তাকে নিষেধ করা কি তার দায়িত্বের মধ্যে ছিল না..!!
এটি সত্যিই একটি ক্রাইম। এর জন্য শাস্তি হওয়া উচিত শিশুগুলোর পরিবারের সকলের। এদের শিশু বলা আমার মতে অমূলক। এরা সমাজে বিকৃত মনের এক অভিশাপ। পরিবারের দেয়া নৈতিক শিক্ষার অভাবেই, তারা আজ এটুকু করার চিন্তাু মাথায় এনেছে এবং অকপটে করে যাচ্ছে। এভাবেই একদিন তারা বড় অপরাধের দিকে ধাবিত হবে।
অনেক অঞ্চলে প্রাপ্তবয়স্করাও এমনটি করে থাকে। শুনেছি জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে মোবাইল, মেয়েদের নাকের দুল, কানের দুল, গলার হার টান দিয়ে ছিড়ে নিয়ে যায় ( জায়গাটা সকলেরই জানা)। আমি খুব বিশ্বস্তজনের কাছেই শুনেছি, এক মহিলার কান ছিড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা, আংটি খুলে নিতে গিয়ে আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়ে যাওয়া, হার নিতে গিয়ে গলায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি করা, মালামাল চুরি ইত্যাদি।
এসব কাজ তারাই করে যারা নেশার টানে চুর হয়ে মানুষ মারতেও দ্বিধাবোধ করে না। নেশার টাকার জোগান দিতে তারা যে কোন প্রকার অপকর্মে লিপ্ত হয়। এরা সমাজে সর্বস্তরে বিচরণ করছে। দুঃখের বিষয় আমাদের চোখের সামনে দিয়ে গেলেও আমরা কিছু বলতে পারি না। তাই, তারা নির্ভয়ে তাদের কাজ সাঙ্গ করতে ব্যস্ত। ফলে, প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য লোকের, হয়রানির স্বীকার আজ প্রায় প্রতিটি মানুষ।
এসবের অবসান কবে হবে...!!! কবে দেশটা সোনার মানুষে ভরে যাবে..? আদৌ, কি এটা হবে...!!!
No comments:
Post a Comment
Never share any links or personal information. Keep your privacy strong.